বিনোদন প্রতিবেদক
আগামী শুক্রবার ( ১৮ জুলাই) প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে সেই গল্প, যেখানে শব্দ নয়, হৃদয়ের ভাষাই হয়ে ওঠে প্রধান সংলাপ। বিপ্লব হায়দার পরিচালিত ‘আলী’ সিনেমা যেন এক নিঃশব্দ জীবনের উচ্চারণ—যেখানে বাক প্রতিবন্ধী এক তরুণের জীবনের হাহাকার, সংগ্রাম, এবং নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি উঠে এসেছে অসাধারণ ভাবে।
এই সিনেমার হৃদয়জুড়ে রয়েছেন ‘সাজু মামা’, যিনি কথা বলেন না শব্দে, কিন্তু ভালোবাসেন নিঃশব্দে, স্নেহ দেন ছায়ার মতো। চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন শক্তিমান অভিনয়শিল্পী শওকত সজল। তাঁর সংযমী অভিনয়, সংবেদনশীলতা ও মানবিকতা—সাজু মামাকে করে তুলেছে এক জীবন্ত প্রতীক, এক নিঃস্বার্থ আত্মার উপাখ্যান।
সাজু মামা শুধুমাত্র একজন আত্মীয় নন, তিনি আলীর জীবনযুদ্ধে এক আশ্রয়, নির্ভরতার ছাতা। তিনি আড়াল করেন, আগলে রাখেন, অথচ নিজেকে কখনো সামনে আনেন না। তাঁর ভালোবাসা কোলাহল করে না, বরং নিঃশব্দে প্রবাহিত নদীর মতো—গভীর, শান্ত, অথচ প্রগাঢ়।
অভিনেতা শওকত সজল বলেন, “সাজু মামা” এমন এক চরিত্র, যাকে বুঝতে হলে হৃদয় দিয়ে দেখতে হয়। তিনি বলেন না, বোঝান; তিনি দেখান না, অনুভব করান। এমন চরিত্র আজকের সমাজে দুর্লভ।
চলচ্চিত্রটির কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘আলী’—এক বাক প্রতিবন্ধী তরুণ, যার চোখে ভাষা, যার মুখে নীরবতা। ইরফান সাজ্জাদের সংযত অভিনয় এই চরিত্রকে এনে দিয়েছে এক অন্যরকম গুরুত্ব। আলীর একমাত্র আপন, নির্ভরতার বাতিঘর তাঁর ছোট বোন রোশনি, যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন নবাগত মেরিদ্দা মেহজাবিন (অর্পা)। ভাই-বোনের এই সম্পর্ক সিনেমার কাহিনিকে দিয়েছে নির্মল আবেগ আর অন্তরের ঋজুতা।
ছবির অন্য চরিত্রগুলোতেও রয়েছে বিশেষমাত্রা। শতাব্দী ওদুদ এক নির্মম পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় তুলে ধরেছেন রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের রূঢ় বাস্তবতা। মিশা সওদাগর এক সৎ ও সাহসী উকিলের ভূমিকায় ন্যায়ের প্রতিচ্ছবি। কাজী হায়াত আছেন বিচারকের চরিত্রে।
এছাড়াও রয়েছেন—ক্রিশ্চানো তন্ময়, সাইফুল ইসলাম, সুমন, নোমিরা ও মোঃ ইকবাল। সিনেমার চিত্রগ্রহণে ছিলেন সোহাগ খান, যাঁর ক্যামেরায় উঠে এসেছে নীরব আবেগের অভিব্যক্তি।
পরিচালক বিপ্লব হায়দার বলেন, তোরী মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত“আলী কোনো একক চরিত্রের গল্প নয়—এটি আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা সেইসব নিঃশব্দ প্রতিবাদীদের কাহিনী, যারা বঞ্চিত, অথচ সংগ্রামী। সাজু মামা সেইসব মানুষের প্রতীক, যারা পরিবারের জন্য নিজের সবটুকু নিঃশব্দে উৎসর্গ করেন।”
‘আলী’ শুধু একটি চলচ্চিত্র নয়—এ এক আত্মার ভাষায় লেখা মানবিক কাব্য। শব্দের অভাব নেই এখানে, আছে হৃদয়ের অতলস্পর্শী সংলাপ। শওকত সজলের সাজু মামা চরিত্রটি যেন আমাদের চারপাশের সেই মানুষগুলোরই রূপক, যারা কখনো কিছু দাবি করেন না, কেবল নিঃশব্দে ভালোবেসে যান।
এই চলচ্চিত্র আমাদের শেখায়—ভাষা থাক বা না থাক, ভালোবাসা যখন সত্য হয়, তখন সে নীরবতাকেই বানায় সবচেয়ে উচ্চারিত শব্দ।
মন্তব্য