মোঃ মনিরুজ্জামান মনির
অনেক অনেক দিন আগের কথা। গ্রামের নাম জন্তিহার। এই গ্রামে বাস করত এক লাঠিয়াল । নাম তার তালেম প্রামানিক। তার ছিল লাঠিয়াল বাহিনী ,তার আরও একটা বৈশিষ্ট্য ছিল। সে কয়েকটা জ্বীনকে বশীকরণ করে তার সাথে রাখতো। নির্দিষ্ট করে বললে এর সংখ্যা হয় সাতটি। এই সাতটা জ্বীনকে তালেম প্রামানিক যা বলতো, জ্বীনগুলো তার সবগুলো আদেশ-নিষেধ মেনে চলতো। ছয়টা জ্বীনকে সে সারাক্ষণ সাথে সাথে রাখতো। আর একটা জ্বীন থাকতো তার বাড়িতে। যে জ্বীনটা তার বাড়িতে থাকতো সেই জ্বীনটা ছিল ল্যাংড়া জ্বীন। তার চলাফেরা করতে অসুবিধা হয় যার কারণে সে বাহিরে কোথাও যায় না।
শুধুমাত্র বাড়ির চতুর পাশে ঘুরে ঘুরে পাহারা দেয়। নাম তার লুলু। লুলুর বাবা কালু , মায়ের নাম শালু।
লুলুর আরও চারটা ভাই আছে ভুলু, টুলু ,দুলু আর ঝালু। বাবা-মা বাদে সবগুলো ভাইকে নিয়ন্ত্রণ করে এই ঝালু। তালেম প্রামানিক এই সকল জ্বীনদেরকে দিয়ে অনেক কাজ করিয়ে নেয়। তার বিপক্ষের লাঠিয়াল বাহিনীকে ঘায়েল করার জন্য তার লাঠিয়াল বাহিনীর সামনে থাকে জ্বীনগুলোকে। তাই তার লাঠিয়াল বাহিনীর সাথে কেউই পেড়ে ওঠে না। অল্প দিনেই তার এই বাহাদুরীর কথা সারা এলাকায় প্রচার হয়ে গেল। গ্রাম্য ভাষায় সবাই বলতো তালেম প্রামানিক ভূত পালে। তার সাথে কেউ লাগতে যেও না। সেই সুযোগে তালেম প্রামানিক ও খুব দাপটের সাথে চলে।
সেই জ্বীনগুলোদেরকে দিয়ে সাংসারিক কাজকর্ম করিয়ে নেয়।
একদিন তালেম প্রামানিক দেখল তার ঘোড়াধাপের ১০ বিঘা জমির সবগুলো ধান পেকে গেছে । জমিটা ছিল কাইজার জমি তাই সে তার লাঠিয়াল বাহিনীকে দিয়ে সারাদিন ধান কাটালো । আর সন্ধ্যা বেলায় ছয়টা জ্বীনকে ধানগুলো আনতে বলল। এদিকে তালেম প্রামাণিকের স্ত্রী কছেরন বেওয়াকে বাড়ির উঠান চত্বরটা ঝাড়ু দিতে বলে, তালেম প্রামানিক জ্বীনগুলোকে নিয়ে জমিতে গেল ধান আনতে। তালেম প্রামানিক দাঁড়িয়ে আছে লাঠিয়াল বাহিনী ধানের বড় বড় বোঝা বেধে জ্বীনদের মাথায় দিচ্ছে তুলে। তালেম প্রামানিক ঝালুকে বলে দিল, তোর দাদি যেখানে ধানের বোঝা রাখতে বলে ঠিক সেখানে রাখবি। সংসারের অন্যান্য কাজের চাপে উঠানে ঝাড়ু দেওয়ার কথা দাদি একদম ভুলে যায়, হঠাৎ মনে পড়তেই দাদি উঠান চত্বরটা ঝাড়ু দেওয়া শুরু করে। এমন সময় জ্বীনেরা দল বেঁধে ধানের বোঝা নিয়ে এসে হাজির হয়। ঝালু ছিল সবার সামনে। ঝালু এসে দাদিকে বলল ,দাদি ধানের বোঝা কই রাখব। দাদি রাগান্বিত হয়ে বলল, কই আর রাখবি আমার মাথার উপর রাখ। যেইনা দাদি বলেছে মাথার উপর রাখ অমনি, ঝালু তার মাথার বোঝা ধাপাশ করে দাদির মাথার উপর ফেলে দেয়। এরপর একের পর এক তার গায়ের উপর ধানের বোঝা ফেলে রেখে ফিরে গেল।
দাদা, ঝালুকে জিজ্ঞেস করল ধানের বোঝা কই রাখছিস? ঝালু সরাসরি উত্তর দিল দাদির মাথার উপর।
দাদা উৎকণ্ঠা হয়ে বলল, এটা তুই কি করেছিস! ঝালু বলল , আমার কি দোষ দাদিই তো বলল আমার মাথার উপর রাখ।
তালেম প্রামানিক ও তার লাঠিয়াল বাহিনী দৌড়ে গিয়ে ধানের বোঝা সরাতেই দেখে তার প্রিয়তমা স্ত্রীর দেহ মাটিতে আর প্রাণ পাখিটা উড়ে গেছে আকাশে। প্রিয়তমা স্ত্রীর শোকে কাতর হয়ে গেল তালেম প্রামানিক। সেদিনের পরদিন সাতটা জ্বীনকে বোতলে ভরে বোতলের মুখ ছিপি দিয়ে আটকালো । এবার ল্যাংড়া জ্বীনটা অনেক কাকুতি মিনতি করে বলতে লাগলো, আমাকে ছেড়ে দাও, আমার তো কোন দোষ নেই। আমাকে ছেড়ে দাও—– আমাকে ছেড়ে দাও।
ল্যাংড়া জ্বীনটার কথা শুনে দাদার খুব মায়া হল। ল্যাংড়া লুলুকে দাদু মুক্ত করে দিল। আর অন্য ছয়টা জ্বীনকে নিয়ে গেল অনেক দূরে। দশ বছর পূর্বে যেখান থেকে এনেছিল সেই চড়াডাঙ্গার বটগাছের নিচে রেখে এলো।
মন্তব্য