(নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ সোহেল রানা)।
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে ঋতুরাজ বসন্তের রাজত্ব ফাল্গুন ও চৈত্রজুড়ে। চৈত্রের অন্তিম দিন মানেই পুরাতন বছরের শেষ অধ্যায়—নতুন বাংলা বছরকে বরণের পূর্বক্ষণ। এই দিনটিকে ঘিরে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘চৈত্র সংক্রান্তি’। আর পরদিনই আসে প্রাণের পহেলা বৈশাখ। পুরাতনকে বিদায় ও নতুনকে বরণ—এই দ্বৈত আনন্দই বাঙালির জাতীয় উৎসবে রূপ নিয়েছে।
চৈত্র সংক্রান্তি পালিত হয় ১৩ এপ্রিল, অর্থাৎ নববর্ষের আগের দিন। একসময় এটি ছিল আঞ্চলিক লোকাচারভিত্তিক উৎসব, বর্তমানে তা ছড়িয়ে পড়েছে জাতীয় পর্যায়ে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ এদিন মিলিত হয় ঐতিহ্যের রঙে।
চৈত্র সংক্রান্তিতে গ্রামবাংলার মানুষ ঘরদোর পরিষ্কার করে, দোকানপাট ধোয়া-মোছা করে পুরাতন জঞ্জাল বিদায় জানায়। ব্যবসায়ীরা ‘হালখাতা’র প্রস্তুতি নেয়—পুরোনো হিসাব গুছিয়ে নতুন খাতা খোলার সূচনালগ্ন। দোকানভরা থাকে ধূপ, ধুনো, গোলাপজল ও আতিথেয়তার ছোঁয়ায়।
আগে গৃহস্থ পরিবারগুলো চৈত্র সংক্রান্তিতে জামাই ও নাতি-নাতনীদের দাওয়াত দিত, থাকত নতুন পোশাক, উন্নত ভোজের আয়োজন। এখন সেই ঐতিহ্য শহুরে সংস্কৃতিতেও রূপ নিয়েছে নানান অনুষ্ঠান, শোভাযাত্রা, গান, নাচ, আবৃত্তি, পটচিত্র প্রদর্শনী, মেলা আর লোকজ উৎসবের মধ্য দিয়ে।
চৈত্র সংক্রান্তির মেলাগুলোতে স্থানীয় শিল্পীদের তৈরি বাঁশ-বেত-কাঠ-মাটি-ধাতুর জিনিস, খেলনা, হস্তশিল্প বিক্রি হয়। বিনোদনের জন্য থাকে যাত্রাপালা, সার্কাস, পুতুলনাচ, নাগরদোলা, ঘুড়ি ওড়ানোসহ নানা আয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোও বাদ যায় না। রঙিন আলপনা, ফুলেল সাজ ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে বিদায় জানানো হয় পুরোনো বছরকে, আর প্রস্তুত হয় নতুনকে বরণ করতে।
চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখের এই যুগল উৎসব শুধু একটি ক্যালেন্ডার পালাবদলের ঘটনা নয়, এটি বাঙালির হৃদয়ের আবেগ, সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয়ের বহিঃপ্রকাশ। গ্রাম থেকে শহর, ব্যবসায়ী থেকে ছাত্র, শিল্পী থেকে কৃষক—সবাই একত্রিত হন এই উৎসবে। জাতি-ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে সবাই মিলিত হন এক আনন্দময় ঐতিহ্যে।
এভাবেই চৈত্রের জীর্ণতাকে বিদায় জানিয়ে পহেলার আশায়, রং আর প্রাণের নবতারায় বাঙালি পা রাখে নতুন এক সম্ভাবনার পথে।
মন্তব্য