এস চাঙমা সত্যজিৎ
স্টাফ রিপোর্টারঃ
“প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হোন” শ্লোগানে ‘লংগদু-নান্যাচর সড়ক নির্মাণের নামে বনাঞ্চল, জীববৈচিত্র ধ্বংসের” বিরুদ্ধে রাঙামাটির সাজেকে র্যালি ও সমাবেশ করেছে সাজেক পরিবেশ রক্ষা কমিটি।
আজ বৃহস্পতিবার (৫ জুন ২০২৫) সকাল ৯টার সময় দ্ব-পদা লাদু মুনি বাজার থেকে একটি র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি সাজেক পর্যটন সড়ক হয়ে উজোবাজারে এসে ইউপিডিএফ-এর কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়। এতে বাঘাইহাট, গঙ্গারাম ও বঙ্গলতলী এলাকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশে সাজেক পরিবেশ রক্ষা কমিটির সভাপতি ও সাজেক কারবারী সমিতির সভাপতি নতুন জয় চাকমার সভাপতিত্বে ও সাজেক পরিবেশ রক্ষা কমিটির সদস্য বাবু ধন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, সাজেক জুম চাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জোতি লাল চাকমা ও সাজেক ইউপির ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার পরিচয় চাকমা।
জোতি লাল চাকমা বিশ্ব পরিবেশ দিবসকে মনে রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আশির দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল আর বর্তমান সময়ের বনাঞ্চল আকাশ-পাতাল ব্যবধান রয়েছে। এক সময় চাম্পাফুল, গর্জনসহ নানা প্রজাতির গাছ-গাছালিতে যেখানে আকাশ দেখা যেত না, সেখানে আজ কাজলং ফরেষ্ট এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। ঠেগা-বরকল-বিলাইছড়ি, কাচলং ফরেষ্ট অঞ্চলের গাছগুলো কাঠব্যবসায়ীদের দ্বারা কর্তন করে ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া পাকা সড়ক নির্মাণের ফলে পাহাড় কেটে প্রচুর বনভূমি উজাড় করে ফেলা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান এই উজোবাজারটিও এক সময় বনাঞ্চল ও বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণীতে ভরপুর ছিল। কাচলং-গঙ্গারাম নদীতে ছিল প্রচুর মাছ। পার্বত্য জেলাগুলোতে সেটেলার পুনর্বাসন করার পর পর কাজলংসহ অপরাপর নদীগুলোর মাছ ধ্বংস করা হয়েছে। সেটেলার বাঙালিদের কাছ থেকে মাছ ধরার বিভিন্ন পদ্ধতি শিখে আজ পাহাড়িরাও মাছ ধরে খালে মাছ শূন্য করে তুলেছে।
তিনি বন্য প্রাণী সংরক্ষণের বন্য প্রাণী শিকার বন্ধ করা এবং বনাঞ্চল রক্ষার্থে অবাধে গাছ কাটা ও সড়ক নির্মাণের নামে পাহাড়, বন-জঙ্গল ধ্বংস বন্ধ করার দাবি জানান।
ইউপি সদস্য পরিচয় চাকমা বলেন, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ঠিক না থাকার কারণে ম্যালেরিয়ার প্রভাব বেড়েছে। যত্রতত্র পলিথিন মাটিতে ফেলার কারণে সেসব পলিথিনে পানি জমা হয়ে মশাবাহিত জীবানু বৃদ্ধির ফলে ম্যালেরিয়াসহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। তাই যত্রতত্র পলিথিন না ফেলে নির্ধারিত জায়গায় ফেলার পর আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করতে গহবে।
তিনি আরো বলেন, সাজেকসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাধে গাছ কেটে ফেলার কারণে বনাঞ্চল উজাড় হয়েছে। একটা গাছ কর্তন করে যেখানে ৫/৭টা গাছ লাগানোর কথা থাকলেও আমরা সেটা করছি না। জীবিকার প্রয়োজনে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় আমাদের বনাঞ্চল সৃজন করতে হবে। কারণ মানুষ যে হারে বাড়ছে, সে হারে বন বাড়ছে না।
নতুন জয় চাকমা বলেন, আজকের এই দিনটি সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে। যে কারণে আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি সেটা ইতিমধ্য আমরা জেনেছি। পৃথিবীতে কোন কিছুই স্হায়ী নয়। আজকে যে রাজনৈতিক ও ধর্মীয়ভাবে আমরা দ্বিধাবিভক্তি তাও স্থায়ী নয়। আমাদের জাতিগত অধিকার নেই, রাজনৈতিক অধিকার নেই। `ভাগ করে শাসন করার’ রাষ্ট্রীয় শাসন নীতিতে আমরা পরিচালিত হচ্ছি। রাজনৈতিক ও জাতিগত অধিকার নিয়েই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যতে যাতে আমাদের প্রজন্ম ঠিকমত বেঁচে থাকতে পারে তার জন্য আমাদের পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে হবে। বর্তমানে বেশ কয়েকটি বিরল প্রজাতির প্রাণী ও গাছ-গাছালি হারিয়ে গেছে। বনভূমি উজাড় হয়ে যাওয়ার ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটেছে। এর ফলে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি হচ্ছে। ছড়া, ঝিরি-ঝর্ণা শুকিয়ে গিয়ে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্যের কারণে মৌসুম ভিক্তিক ফলমূলসহ ফসল উৎপাদন ঠিকমত হচ্ছে না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার ইতোমধ্যে লংগদু-নান্যাচর সড়ক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। সেই সড়কটি নির্মিত হলে সেখানে বন, পাহাড় ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে। যেভাবে সীমান্ত সগড়ক ও সাজেকে সড়ক নির্মাণের ফলে বনজঙ্গল উজাড় হয়ে গেছে। লংগদু-নান্যাচর সড়কটি নির্মাণ করা হলেও একইভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়বে। তিনি উক্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাচ্ছুরি (বাঁশ কোড়ল) মৌসুম শুরু হয়েছে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ বাচ্ছুরি বিক্রি করে বাঁশ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তাই তিনি বাচ্ছুরি বিক্রি/নিধন বন্ধ করার সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
মন্তব্য