নাজমুল ইসলাম (মির্জাপুর উপজেলা প্রতিনিধি)
টাংগাইল মির্জাপুরে ১০ বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় রবিবার (০৯ মার্চ) দুপুর ১২:৩০ মিনিটে আজাগানা ইউনিয়নের হাটুভাঙ্গা বাজারে আজগানা ইউনিয়নবাসি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সামবেশের আয়োজন করে।
উপজেলার গোড়াই-সখিপুরের রাস্তা আটকিয়ে ঘন্টা ব্যাপি মানববন্ধন শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সমন্বয়ক আলামিন, যোবায়ের আহমেদ, ইমন সিদ্দিকী, সিয়াম, নেহা, অপরুপা,রাকিবুল ইসলাম, ছাত্র শিবিরের নেতা মোজাহিদ,মিরাজ এবং আরাফাত হোসেন সহ প্রমুখ।
এ সময় ধর্ষক ফিরোজ মিয়া ও স্থানীয় মাতাব্বর বাবুল,আব্দুল মালেক মিয়া, ফাজু, ইউনুছ আলী, নুর ইসলাম, আলম হোসেন, খোরশেদ আলম ও আলীমসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। এর আগে শিশু ধর্ষনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে গ্রাম্য শালিসে মাতাব্বরগন শিশুর ইজ্জতের মুল্য দেড় লাখ টাকায় রফা করে। শালিসে ধর্ষককে জুতাপেটা করা হয়। দেড় লাখ টাকার মধ্যে ৯২ হাজার টাকা শিশুর পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও বাকী ৫৮ হাজার টাকা নিয়ে মাতাব্বরগন লাপাত্তা। লোক লজ্জায় মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে অসহায় পরিবার। ঘটনা জানাজানির পর এলাকায় তোলপাড় হলে পালিয়ে যায় ধর্ষক। অমানবিক এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে গতকাল শনিবার সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসন ও মির্জাপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। আইনী ব্যবস্থা নিতে ধর্ষিতা শিশু ও তার মাকে খুঁজে বের করে থানায় ডেকে এনে অভিযুক্তদের নামে মামলা নিয়েছেন।
জানা গেছে, আজগানা ইউনিয়নের কুড়িপাড়া গ্রামের সৌদি প্রবাসির স্ত্রী দ্বিতীয় শ্রেণী পড়ুয়া শিশু কন্যাকে নিয়ে বাড়িতে থাকেন। সংসারের অভাব অনটনের মধ্যে শিশুর মা গার্মেন্টসেও কাজ করেন।
আনুমানিক গত ২০-২২ দিন আগে সোমবার মেয়েকে বাড়িতে রেখে তার মা কাজে যান। বাড়িতে অন্য কেউ না থাকায় কুড়িপাড়া গ্রামের নওসের আলীর ছেলে ফিরোজ মিয়া (৩২) শিশুকে কৌশলে টয়লেটে নিয়ে ধর্ষন করে এবং তার মোবাইলে ভিডিও করে। ভিডিও করে তাকে হুমকি দেয় ঘটনা কাউকে বললে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ধর্ষনের ঘটনার কয়েক দিন পর বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে এলাকার মাতাব্বর বাবুল,আব্দুল মালেক মিয়া, ফাজু, ইউনুছ আলী, নুর ইসলাম, আলম হোসেন, খোরশেদ আলম ও আলীমসহ ১৫-২০ জন মাতাব্বর গ্রাম্য শালিসে ধর্ষক ফিরোজকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা এবং জুতাপেটা করা হয়। দেড় লাখ টাকার মধ্যে ৯২ হাজার পরিশোধ করা হলেও বাকী টাকা নিয়ে লাপাত্তা দিয়েছে মাতাব্বরগন। মাতাব্বরদের চাপে ঘটনা মিমাংসা করা হলেও শিশু কন্যাকে নিয়ে বিপাকে পরেন পরিবার। লোক লজ্জার ভয়ে মেয়ে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন।
এদিকে ঘটনা সামাজিক যোগাােযগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে ধর্ষক ও মাতাব্বরদের শাস্তির দাবীতে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। গতকাল শনিবার মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম আরিফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার মির্জাপুর সার্কেল এইচ এম মাহবুব সিদ্দিকী ও মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোশারফ হোসেনের সার্বিক সহযোগিতায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ আজগানা ইউনিয়নের কুড়িপাড়া গ্রামের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ধর্ষিতা শিশু ও তার মাতাকে খুঁজে বের করে রাতে থানায় নিয়ে আসেন। ধর্ষিতার পরিবারকে সার্বিক নিরাপত্তা এবং ধর্ষকসহ মাতাব্বরদের নামে মামলা করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাতে এই মামলার বাদী হয়েছেন শিশুর মাতা।
অপর দিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশুকে ধর্ষন ও ভিডিও করার খবর ছড়িয়ে পরলে এলাকায় শিক্ষার্থীসহ সচেতন মহলের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে ধর্ষিতা শিশুর মাতা বলেন, ধর্ষক ফিরোজ ও তার পরিবার এবং মাতাব্বরদের চাপে শালিসে রাজি হয়েছিলাম। লোকলজ্জার ভয়ে আমি প্রথমে মামলা করতে সাহস পাইনি। উপজেলা প্রশাসন এবং পুলিশ আমার পাশে এসে দাড়িয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি চাই এবং আমার শিশু কন্যাসহ আমার পরিবারের নিরাপত্তা চাই।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম আরিফুল ইসলাম এবং মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোশারফ হোসেন বলেন, কুড়িপাড়া গ্রামে শিশু ধর্ষনের ঘটনাটি খুবই অমানবিক এবং দুঃখ জনক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটি জানার পর প্রশাসন থেকে শিশুর পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। শিশু ও তার মাকে খুঁজে বের করে থানায় এনে মামলা নেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ধর্ষক ফিরোজ ও মাতাব্বরগন পলাতক। তাদের গ্রেফতারে কাজ করছেন পুলিশ।
মন্তব্য