(পাবনা থেকে- এস এম মনিরুজ্জামান আকাশ ও আব্দুল খালেক)
আজ ৩০ জুন, পাবনার সাংবাদিকতা জগতে এক পরিচিত নাম এবিএম ফজলুর রহমানের জন্মদিন। তিনি শুধু একজন সাংবাদিক নন, পাবনা তথা দেশের নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের কাছে একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব এবং অকুণ্ঠ বন্ধু। মুক্ত সাংবাদিকতার বিকাশ, সাংবাদিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ এবং দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে তাঁর ভূমিকা অনবদ্য।
১৯৬৯ সালের ৩০ জুন বৃহত্তর পাবনার বেলকুচি উপজেলার বেড়াখারুয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এই সাংবাদিক। তাঁর পিতা, নুরুল হুদা মিয়া, ছিলেন বেলকুচি উপজেলার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সমাজ সেবক এবং পাবনা জেলা বোর্ডের সাবেক সদস্য। মা মরহুমা হামিদা খাতুন।
সাংবাদিকতার দীর্ঘ পথচলা :
ছাত্রজীবন থেকেই সাংবাদিকতার প্রতি এবিএম ফজলুর রহমানের ছিল প্রবল আগ্রহ। রংপুর কারমাইকেল কলেজের ছাত্র থাকাকালীন স্থানীয় দৈনিক দাবানলের মাধ্যমে তাঁর সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। ১৯৮৫ সালে তিনি যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক রানার এবং ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক নব অভিযানের পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত দৈনিক দেশ এবং ১৯৮৭ সাল থেকে দীর্ঘ ১০ বছর ইউএনবি’র পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৭ সালে ইউএনবি ছেড়ে তিনি অ্যাসোসিয়েটস প্রেস অব বাংলাদেশ (এপিবি)-তে যোগ দেন। ১৯৯৯ সালের ২১ নভেম্বর তিনি দৈনিক যুগান্তরের পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন এবং ২০০৩ সালে পদোন্নতি পেয়ে স্টাফ রিপোর্টার হন। ২০০৩ সাল থেকে এনটিভি’র জন্মলগ্ন থেকেই তিনি পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৫ সালের মার্চ মাসে দৈনিক সমকালে যোগ দেন এবং বর্তমানে তিনি পাবনা অফিসের ব্যুরো প্রধান হিসেবে কর্মরত। এছাড়াও তিনি জার্মান রেডিও ডয়েচে ভেলে এবং সংবাদ সংস্থা রয়টার্স’র স্ট্রিংগার হিসেবেও কাজ করেছেন। bdnews24.com-এর জন্মলগ্ন থেকে তিনি পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
নেতৃত্ব ও জনসেবায় অবদান :
সাংবাদিকতার পাশাপাশি এবিএম ফজলুর রহমান নেতৃত্ব ও জনসেবামূলক কাজেও সক্রিয়। তিনি ২০০১-২০০৩, ২০০৩-২০০৫ এবং ২০০৫-২০০৭ সালে ঐতিহ্যবাহী পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পদে হ্যাট্রিক করেন। পরবর্তীতে, ২০০০-২০২২ এবং ২০২২-২০২৪ মেয়াদে পর পর দুই বছর তিনি পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। উল্লেখ্য, এই প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য হিসেবে রয়েছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু। পাক হিতৈষী ও দি ডন পত্রিকার প্রতিনিধি একেএম আজিজুল হক বিএসসি ক্যাল, ভাষা সৈনিক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক কলামিস্ট রণেশ মৈত্র এই প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সম্পাদক ছিলেন। স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরী, মহান মুক্তিযুদ্ধের উপ-সেনাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার এবং ভাষা মতিন হিসেবে পরিচিত আব্দুল মতিনও এই প্রেসক্লাবের সম্মানীয় জীবন সদস্য ছিলেন। প্রখ্যাত সাংবাদিক মির্জা শামসুল ইসলাম, এম আনোয়ারুল হক, কমরেড প্রসাদ রায়, পাবনার সংবাদপত্র জগতের কিংবদন্তি শফিউর রহমান খান, হাসনাত উজ জামান হীরা, সেরাজুল ইসলাম তোতা এবং মুহম্মদ মহিউদ্দিন এই প্রেসক্লাবের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। বর্তমানে সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি, সাবেক সভাপতি প্রফেসর শিবজিত নাগ, এবং সাবেক সম্পাদক আব্দুল মতীন খান এই পেশার আলোকবর্তিকা হয়ে আলো ছড়াচ্ছেন।
১৯৯৪ সালে তিনি পাবনা থেকে সর্বপ্রথম পিপল ইন্টারেস্টেড প্রেস ‘পিপ’ নামক একটি সংবাদ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন, যা দেশের প্রায় ৬০০ আঞ্চলিক সংবাদপত্রে সংবাদ সরবরাহ করে। তিনি পাবনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (পিসিসিআই)-এর নির্বাচিত পরিচালক এবং দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)-এর জেনারেল বডি মেম্বার। এছাড়াও তিনি পাবনা চেম্বার কর্তৃক গঠিত মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান। বর্তমানে তিনি কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) পাবনা জেলা শাখার সভাপতি, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, পাবনার সাধারণ সম্পাদক, এবং বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সুনাম ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পাবনার আজিজিয়া নুরানী ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এবং নতুন কুঁড়ি প্রি ক্যাডেট স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি। এছাড়াও সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করছেন।
পারিবারিক জীবন :
এবিএম ফজলুর রহমান চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে একজন। তাঁর ভাইয়েরা হলেন মরহুম হারুন-অর-রশিদ, মোঃ সাইফুল ইসলাম, মরহুম এস এম সেলিম রেজা। বোনেরা হলেন মোছাঃ কোহিনুর বেগম, মোছাঃ সাহিদা আখতার ও জয়নব খাতুন। তাঁর সহধর্মিনী মাহবুবা রহমান কাজল একজন গৃহিণী এবং ইসলামিক টেলিভিশন ও দৈনিক দেশবাংলা পত্রিকায় পাবনা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন (বর্তমানে দুটি প্রতিষ্ঠানেরই সম্প্রচার ও প্রকাশনা বন্ধ)। তিনি দুই পুত্র সন্তানের জনক। বড় ছেলে এবিএম ফারিব রহমান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ফিনান্স বিভাগ থেকে অনার্স সম্পন্ন করে মাস্টার্স শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত। ছোট ছেলে এবিএম ফাইয়াজ রহমান গত বছর পাবনা স্কয়ার হাই স্কুল এন্ড কলেজ থেকে সকল বিষয়ে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে আগামী বছর এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এবিএম ফজলুর রহমানের এই জন্মদিনে তাঁর সুখী ও সুন্দর জীবন কামনা করছি।
মন্তব্য