আজ বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের এক অনন্য বাতিঘর, ৭১-এর বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং গণফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টু।
এই মৃত্যু জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
মোস্তফা মহসিন মন্টু—একাত্তরের রণাঙ্গনের সাহসী সৈনিক, গণতান্ত্রিক চেতনার ধারক-বাহক, এবং একজন নিষ্ঠাবান মানবিক রাজনৈতিক নেতা—ছিলেন এমন এক ব্যক্তিত্ব যাঁর জীবন মানেই ছিল জনগণের অধিকার রক্ষার সংগ্রাম। তাঁর প্রস্থান যেন শুধু একটি মানুষ বা নেতা হারানো নয়; এ যেন একটি নৈতিক অবস্থান, এক ইতিহাসসচেতন বিবেকের প্রস্থান।
দেশের রাজনৈতিক বিবর্তনের প্রতিটি বাঁকে তিনি ছিলেন দৃঢ়, স্থিতধী ও আপসহীন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান যেমন ছিল অনস্বীকার্য, তেমনি পরবর্তী সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাঁর সাহসী উপস্থিতি ছিল দৃষ্টান্তমূলক। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি রাজনীতিকে একটি পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে পালন করে গেছেন—জনগণের সেবায়, আদর্শের কাছে অটল থেকে।
আজকের বিভ্রান্তিমূলক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাঁর মতো চিন্তাশীল, সংযমী ও স্পষ্টভাষী মানুষের মৃত্যু শুধু ব্যক্তিগত শোক নয়—এ এক রাষ্ট্রীয় শূন্যতা। তাঁর অভাব অনুধাবন করবে প্রতিটি সেই মানুষ, যে নীতিকে শ্রদ্ধা করে, আদর্শকে ভালোবাসে।
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে আমি লক্ষ্য করেছি, এমনকি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-ও তাঁর প্রয়াণে গভীর শোক ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছে। এই শোকবার্তাটি কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না—তারা তাঁর রাজনৈতিক সততা, মুক্তিযুদ্ধের অবদান এবং গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অবিচল ভূমিকার প্রশংসা করেছে। মতাদর্শগত ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও, একটি বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির পক্ষ থেকে এ ধরনের আন্তরিক স্বীকৃতি মোস্তফা মহসিন মন্টুর ব্যক্তিত্বের প্রকৃত মর্যাদাকেই তুলে ধরে। এ এক নিঃশব্দ অথচ শক্তিশালী রাজনৈতিক সম্মান।
আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার, রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও অসংখ্য গুণমুগ্ধ শুভানুধ্যায়ীকে জানাই আন্তরিক সমবেদনা।
জাতি মোস্তফা মহসিন মন্টুকে স্মরণ রাখবে সেই রাজনীতিবিদ হিসেবে—যিনি কখনও মঞ্চ দখলের প্রতিযোগিতায় ছিলেন না, কিন্তু চুপচাপ মঞ্চকে নীতির আলোয় আলোকিত করে রাখতেন।
মন্তব্য