
মোঃ মকবুল হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি:
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের চলমান সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রমে সবসময় পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বাংলাদেশের জনগণকে উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য অবিচলভাবে কাজ করে যাবে।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে গুতেরেস লিখেছেন, “বাংলাদেশের বর্তমান সংস্কার ও পরিবর্তনের যাত্রায় জাতিসংঘ সবসময় পাশে থাকবে।” তার এই সফরের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করা, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করা এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করা।
বাংলাদেশ সফরে জাতিসংঘ মহাসচিব:
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান। শুক্রবার সকালে তিনি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে গিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং মানবাধিকার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
এরপর জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তারা জাতিসংঘের সহযোগিতায় পরিচালিত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা করেন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও সংহতি প্রকাশ:
দুপুরের পর গুতেরেস ও ড. ইউনূস কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান। সেখানে তারা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য পরিচালিত বিভিন্ন কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার তৎপরতা সম্পর্কে খোঁজ নেন। সফরের এক পর্যায়ে তারা প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করেন, যা মানবিক সংহতির এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফরের অংশ হিসেবে আগামীকাল তিনি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে।
গুতেরেস ও বাংলাদেশ দীর্ঘদিনের সম্পর্ক:
অ্যান্তোনিও গুতেরেস বহুদিন ধরেই বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কাজ করছেন। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (UNHCR) প্রধান থাকাকালীনও তিনি রোহিঙ্গাদের দুর্দশা প্রত্যক্ষ করতে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। তার সাম্প্রতিক সফরও সেই ধারাবাহিকতার অংশ, যা বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, মানবাধিকার, এবং শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘের সহযোগিতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে মহাসচিব আশ্বস্ত করেছেন।