সবকিছু ভালো রাখার সুষ্ঠু সমাধান

ভিশন এস টিভি ডেস্ক
প্রকাশের সময়: বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫ । ৯:১১ অপরাহ্ণ

সৈয়দা রাশিদা বারী

রাফিয়া বলছিলো সাফিয়াকে: একজন মা পুত্রকে বিয়ে দিয়ে গোপনে লুকিয়ে কাঁদে! উপরে লোক দেখাতে গায়ে গতরে রং মাখে! তাল দিয়ে হাসে! গীত গাই! নাচে! কিন্তু মনে মনে বিভরে কাঁদে! যখন বিয়ে হয়ে, শাশুড়ির কান্না দেখেছিলাম, উনি বলেছিলেন সব ছেলেই পর হয়ে গেছে! বিয়ে হয়ে! ফরিদ ছিলো। মা মা করে ডাকতে ডাকতে বাড়িতে আসতো! যা আনতো হাতে দিতো, এখন থেকে তাও শেষ হয়ে গেলো! ফরিদ আর দেবে না। দেওয়ার জন্য মা মা করে আমার আর খুজবে না। আমি কিন্তু তখন এর অর্থ মর্থ বুঝি নাই। চোখের জলের কারণ এবং ওইসব কথার মানে কি? কিছুই বুঝি নাই। আজ এখন তার অবর্তমানে, নিজেও ভুক্তভোগী আসামি হয়ে বুঝতে পারছি। শাশুড়ি অনেকদিন হয় গত হয়েছেন। আল্লাহর ডাকে পরপারে চলে গিয়েছেন। এছাড়াও গভীর রাতে শাশুড়ির কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙে যেত আমার! কান্নায় যা বলতেন বিনিয়ে বিনিয়ে উচ্চারণ করে। সেটা আমি তখন রহস্য মনে করে তাচ্ছিল্য করি নাই বটে। কারণ সেটা আমি করা শিখি নাই। আর যাই হোক আমার বাবা-মা আমাকে বেয়াদবি করা শিখায় নাই। তবে দুঃখ পাই এবং পাচ্ছি, অনুতপ্ত হচ্ছি, নিজের প্রতি খুব অমানবিক ধারনায় অনুতপ্তিত হচ্ছি। তাকে সান্তনা না দেওয়া, আমি আমাকে ক্ষমা করতে পারছি না! তবে আমি ওইটা করতে হবে, তখন সেটা বুঝতামও না! এইজন্য নিজের কাছে নিজের অপরাধ আবার শিথিলও হচ্ছে। শাশুড়ির করা বিলাপ, বেদনা, শব্দ কথাগুলো ছিলো তার জন্মদাতা বাবার সম্বন্ধে জবাবদিহিতা এবং নালিশ করা মুলক। যেমন ও আব্বারে আব্বা, তুমি আমার কোথায় ফেলালে। কার কাছে দিয়ে গেলে। বাড়িতে যাইয়া আমি কোনে দাঁড়াবো। কার কাছে বসবো। তুমি কেন একবারও আমার কথা ভাবলে না। আমার ফাঁকি দিয়ে, সব তুমি ভাইদের লিখে কি করে দিলে? তুমি আমার ফাকি দিয়ে হজ করতে গেলে, এই হজ কি তোমার আল্লাহ কবুল করবিরে ও আমার আব্বারে…! আব্বারে আমি মুখ দেহাবো কেমবায়া, মানুষ তো আমার থুথু দিচ্ছে। তুমি আমার অপমান করেছ, আমার মুখে কালি দিচ্ছে। তোমার কি একবারও আমার কথা মনে হয় নাই … আমি তোমার মেয়ে! কত ভালবাসার ছিলেরে আব্বা তুমি আমার…! তুমি আমার বলতে আমিও তোমার কত সাধের মেয়ে… সেই তোমার সাধের মেয়ের, তুমি এই করলেরে আব্বা! ও আব্ব … সেই মেয়ের পানিতে ফেলা দিলে… ? নদীতে ভাসা দিলে…সাগরে ডুবা দিলে… ইত্যাদি! আমি কেন তখন, তার পাশে গিয়ে, তাকে সান্ত্বনা দেয়নি, এখন এটাই আমার আফসোস। পরবর্তীকাল এবং এখনকার মতো তখন বুঝলে ঠিকই পাশে গিয়ে দাঁড়াতাম। গায়ে হাত মাথায় হাত বুলিয়ে সান্তনা দিতাম। আসলে জানার তো শেষ নাই। উপলব্ধি আহরণেরও বয়স নাই। পর্যায়ক্রমে মানুষ ভুক্তভোগী হয় আর এক একটা বিষয় অর্জন করতে সক্ষম হয়। তবে এই কথা ঠিক যে, কাকতালীয়ভাবে কিছু হয় না। অবশ্যই মহান আল্লাহর ইচ্ছা দয়া আশীর্বাদ ছাড়া কিছু হয় না।
নিজের শুধু লাগে নিষ্ঠতা ও ধৈর্য। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে, কাজে কর্মে দায়িত্ব পালনে একনিষ্ঠ থাকলে, ধৈর্য সহ্য হারা না হলে, ঘরে সাফল্যর ফসল আসতে বাধ্য। একজন মায়ের ত্যাগ তিতিক্ষার ফসল হয় তার দেখে যাওয়া নতুন প্রজন্ম! কিন্তু গোলাপ পেতে, গোলাপ তুলতে সেখানে গোলাপের সাথেই কাটার আচর! কাটার আঘাত থাকবেই চিরচারিত নিয়ম! একজন পুত্রবধূ এবং মা, কেন তাদের মধ্যে বিরোধ থাকে?! কেনই বা উভয়ে উভয়ের প্রতিপক্ষ?! কেনই বা উভয়ে উভয়ের সইতে পারে না?? বিরাজ করে জ্বালা যন্ত্রণা?!! কারণ এখানে থাকে ভালোবাসার প্রতিদ্বন্দ্বিতা! মায়ের ভালোবাসা! স্ত্রীর ভালোবাসা! পার্থক্য হলো মা অন্তরকরণে চান, জগতের আর কারো না, একমাত্র শুধু তার পেটে ধরা নিজের সন্তানের সান্নিধ্য এবং ভালোবাসা পেতে। আর স্ত্রী মনে করে তার স্বামী একমাত্র তাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসবে না। কারো সান্নিধ্যেতা দেবে না। চাই তার স্বামীর সে ছাড়া আর কেউ ভালোবাসবে না। ভালোবাসায় তার প্রতিদ্বন্দি কেউ থাকবে না। একদম রাজনীতিতে যেমন ডান দল, বাম দল! রাষ্ট্র পরিচালনায় বিরোধী দলের অবস্থান যেমন হয়! তবে মা তো তিলে তিলে মানুষ করেই পুত্রের উপর অধিকার করে। স্ত্রী স্বামীকে রেডিমেট মানুষ করা প্রতিষ্ঠিত স্বামী বিবাহর সুবাদে পেয়েই একদম, উড়ে এসে জুড়ে বসে! জুড়ে তো বসেই শাশুড়িকে ঘরের নেতর, আবর্জনায় পরিণত করে ডাস্টবিনে যত দ্রুত ফেলবে, ততোই তার শান্তি! প্রতিপক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী চায় না কেউ সেটাই স্বাভাবিক। এর একটাই উপায় প্রতিপক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বি ভাববে না। কিন্তু পুরুষ তো নিজের স্বার্থে সেটা করে না। পুরুষ জন্মেই নেতা থাকতে চাই। পুরুষ একাধিক নারীকে ভোগের সামগ্রী বানাতে চাই। পুরুষ নারীকে নেতা হওয়া চাইনা। সকল আধিপত্য নেতৃত্ব কর্তৃত্ব পুরুষ নিজের আওতাভুক্ত করে রাখতে চাই। সেই জন্য এই পলিটিক্সে। ওদের পলিটিক্স এর কারনে নারী নারীকে শত্রু ভাবে। তার মধ্যে প্রধান ও ১নাম্বার, পুত্রবধূ শাশুড়ির সাথে শত্রুতা করে। শাশুড়িকে শত্রু ভাবে। শত্রু ভাবা মানেই তো, আওয়ামী লীগ বিএনপির মানুষের দেখেও তো বুঝা যায় এবং বুঝা দরকার! কেউ কারো অস্তিত্ব টিকে থাকা চাইনা। মেরে ফেলতে পারলেই বাঁচে। তবে এখানে পার্থক্য আরো একটা আছে। মা তার সন্তানের উপরে ভালোবাসার এবং সান্নিধ্যে অবস্থানের দাবি করে, পুত্রবধূকে নিয়েই থেকে। পুত্রবধূকে ছেড়ে নয়। কারণ পুত্রবধূর মধ্যে তো তার প্রজন্ম এই স্বার্থ রয়েছে। কিন্তু পুত্রবধূ ওই ছাড় দেবে না। কারণ শাশুড়ির মধ্যে তার আর কোন নতুন কিছু পাওয়ার স্বার্থ নাই। বরং না থাকলেই যা কিছু আছে, ফুল ও ফিল ভোগ করা যায়। একলা চুটিয়ে ভোগ করা যায়। শাশুড়ি মরে গেলে, শাশুড়ির নামের সম্পদ স্বামীর হয়। স্বামীর থাকলে নিজের হয়। এই মন মানসিকতায়। একটা জিনিস গবেষণার বিষয়, মা-বাবার থাকলে সন্তানের হয়, কন্যা এবং জামাইয়ের হয়। পুত্র এবং পুত্রবধূর হয়। নাতি পুতির হয়। হ্যাঁ মায়ের ঔরসের প্রত্যেকের অধিকার হয়, অধিকার থাকে। কিন্তু সন্তানের যতই হোক, সেটা কিন্তু মা-বাবার হয় না। এই কারণেই পুত্রবধূর কাছে শাশুড়ি বোঝা এবং শত্রু মনে হয়। ময়লা নেতর আবর্জনা মনে হয়। তাই সে চায় তাকে ঝেটিয়ে বিদাই করতে। দূর করে দিতে। আর মৃত্যু হলেই যেহেতু আবর্জনা শত্রু পরিষ্কার হয়ে যায়। এই পরিকল্পনায় তার কাঁচা মনের মধ্যে কাজ করে, তাইতো সেটা করতে উঠেপড়ে লাগে। সে যে এটা ভুল করে, যখন নিজে সে শাশুড়ির অবস্থানে পৌঁছে তখনই সেটা উপলব্ধি করতে এবং বুঝতে পারে। কিন্তু পিছনের দিন তো কখনো সামনে আসে না। যা যায় সে তো ফেরে না। কাজেই সংশোধনের পথ থাকে না। সংশোধনের পথ উপায়ান্তর একটাই আছে। যেটা পুরুষ পুরুষের নেতৃত্ব কর্তৃত্বর লোভে করে না! পুরুষ সেটা করলে নারী একে অপরকে সম্মান করবে। শত্রু ভেবে পুত্রবধূ শাশুড়িকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইবেনা। হ্যাঁ সেটা আর কিছুই না, পুরুষরা যদি একটু ছাড় দিতো তবে সম্ভবত হতো। একমাত্র যদি বাবা-মায়ের সম্পদ পুত্র-কন্যার মধ্যে সম অধিকার থাকতো। তাহলে কিন্তু চারিদিকের সকল ভেজালও নির্মূল হতো এবং সবাই ভালো থাকতো। শান্তিতে থাকতো। পুরুষ রাজি হয় না কেন?? বলেছি তো নারীর ঘাড়ের উপর কাঁঠাল ভেঙে খেতে, পুরুষ মোটা অংকের স্বার্থ হাসিলের জন্য সেটা করে না। ষড়যন্ত্র কারী পুরুষ, কচ দেখিয়ে দেয়, মহান আল্লাহ এবং নবীজির … ! অথচ এই সবও ভুয়া ভেজাল। নারীকে এইভাবে উনারা ঠকাতে পারেন না। ভুয়া ভাজানের জন্য পুত্রবধূ শাশুড়িকে বোঝা বানাতে, যা করা লাগে তাই করে। সবই তো নারীর ব্যাপার-স্যাপার। অথচ প্যাচ লাগিয়ে রেখেছে পুরুষ। বাবা মায়ের সম্পদ দুই ভাগ নিয়ে। বাবা মায়ের সম্পদ পুত্র দুই ভাগ না নিলে, পুত্রবধূ শাশুড়িকে শত্রু ভেবে দমাতে এবং সরাতে উঠে পরে লাগতো না। প্রতিপক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতো না। স্বামীর মা স্বামীর বেহেশত, স্বামীর জান্নাত জেনেও, তাকে লাঞ্ছিত গঞ্জিত অপমানিত অপদস্থ হয়রানি করতে, যতো রাজ্যের এলাহী কাণ্ডকারখানা করতোনা। একজন ভালো শাশুড়িরও মন্দ অপবাদ দিতো না। বরং শাশুড়ির উন্নয়ন উন্নতি, শারীরিক মানসিক সকল ধরনের সহায়ক সহায়তা করতো বিরোধীতা না করে। স্বামীর ভালোবাসাকে নিয়েও শাশুড়ির সাথে, নিজের পক্ষপাতিত্ব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিযোগিতা মাথায় খেলে, যাতা কলে আটকিয়ে পৃষ্ঠ নিজেও হতো না। শাশুড়িও কেউ কোন পুত্রবধূ করতো না। কেননা শাশুড়ির ধাপ একসময় তারও তো নিজের উপর পরে। সে নিজেও শাশুড়ির ধাপে পৌঁছায়। তখনো এই একই কাজ হয়। স্বামীর দরদীনি স্বামীর মা জননী। তারো দরদীনি তার মা জননী। ঠিক এটাতেই স্থির থেকে, নারীরা সবাই ভালো থাকতো। পুত্র যে কন্যার ডবল নেয় মাতা পিতার সম্পদ। এটাই কিন্তু পুরুষের জন্য হয় অপশক্তি। অপচয় অপশক্তি অপকর্ম হজম না হওয়া অযির্ণর লক্ষণ! এবং এই রোগ দেহে মনে লালন করা, অবশ্যই ক্ষতিকর। আগামীতে সবাই ভালো থাকতে। এমনকি রাজনীতির মাঠও ভালো রাখতে। শ্লীলতার সাথে পৃথিবীর সবকিছু ভালো দেখতে।‌ লাগবে শুধু মা-বাবার ঘরে পুত্র কন্যার সম অধিকার থাকা। নারী পুরুষ সমান অধিকার বা স্বামীর সাথে সম অধিকারের দরকার নাই। মা-বাবার সহায় সম্পত্তিতে সম অধিকার এইটা বড়ই প্রযোজ্য। যা একমাত্র সবকিছু ভালো রাখার বস্তুনিষ্ঠ সুন্দর পরিপাটি পরিচ্ছন্ন রাখার সুষ্ঠু সমাধান।

৯.৭.২০২৫ ইং, বিকাল সাড়ে ৫টা, বৃহস্পতিবার।

চেয়ারম্যান মোঃ সোহেল রানা

হেড অফিস ঢাকা মতিঝিল। E-gmail : Visionstv24@gmail.com মোবাইলঃ ০১৮১০-৫৫২৪৪৬

প্রিন্ট করুন